ছাত্রদের অবমূল্যায়ণ: ফলাফল শুভ নয়
গাজী সাইফুল ইসলাম
ভিপি নূরকে অনেক রাজনীতিবিদ, বিশেষ করে,
নিচের দিকে যারা আছেন গুরুত্ব/পাত্তাই দেন না। যেন কিছু না
ফুঁ। কিন্তু ওপরের দিকে একটু আধটু নড়নচড়ন আছে পুলিশের অতি কর্মতৎপরতা দেখে, থেকে বোঝা যায়। না হলে ধর্ষণ মামলার আসামী ধরেও কয়েক
ঘণ্টা পর ছেড়ে দিলো কেন? এটা অবশ্য ছাড়া পাওয়ার পর নূর বলেছে: ‘‘ভয়-ভীতি দেখিয়ে চুপ করিয়ে দেওয়ার জন্য।’’
আমরা জানি, বিরোধীদল নামে যে একটি দল একদা বাংলাদেশে ছিল, সেটি এভাবেই বিলুপ্ত হয়ে গেছে বা যাবার পথে।
ভয়-ধমকিতে কাজ না হলে হাত-পা বেধে বঙ্গোপসাগরে ছুঁড়ে মারার কৌশলও তাদের জানা আছে।
আগে যারা ক্ষমতায় ছিল তাদের সময়েও এ রেওয়াজটাই চালু ছিল। থাকতেই পারে রাজনীতিতে
যেখানে শেষ কথা কিছু নেই। এতে অবশ্য আমি অন্তত পুলিশ ভাইদের কোনো দোষ দেখি না, তাদের যেমন বলা হয়, তেমন করেন। উপরের নির্দেশ মানতেই হয়।
আমি একটা বিষয়ে বিশেষভাবে
চিন্তিত, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ছাত্র রাজনীতির আঁতুরঘর যেটিকে বলা হত, থেকে স্বাধীনতার পর কোনো সার্ববৈ স্বাধীন, দল-মত নিরপেক্ষ নেতা কি বের হয়েছে? হতে পেরেছে?
কত ভালো ছাত্র লেজুরবৃত্তির রাজনীতিতে যোগ দিয়ে দুর্নীতিতে
আকণ্ঠ নিমজ্জিত হয়েছে কিংবা পুলিশের, জেল জুলুমের ভয়ে রাজনীতির পথ ছেড়ে ঠিকাদারীর পথ বেছে নিয়েছে। আমারা দেখেছি। আর
ভিন্নমতের অনেককেই উগ্রপন্থীরা মেরে ফেলেছে,
বাকিরা সরকারের ভয়ে দেশে ছেড়ে পালিয়েছে। জীবন ভালোবাসে বলে।
কিন্তু এ দেশটা তো সবার। যে সাড়ে সাতকোটি মানুষ নিয়ে বঙ্গবন্ধু দেশটি স্বাধীন
করেছিলেন বর্তমানের আঠারো কোটি তো তাদেরই ডাল-পালা, লতাপাতা। তাহলে কাউকেই যদি আমরা গড়ে উঠতে না দিই, সবাই যদি ফুল-পাখি-মাছ-গাছের ছড়া, গান নিয়ে মাথামাথি করেই দিন পার করে, তোষণে ব্যস্ত হয়ে পড়ে প্রচলিত রাজনীতি আর নেতা-
নেতৃর, তাহলে এদেশের
ভবিষ্যৎ কী? এখানে তো বড়
বিজ্ঞানি, দার্শনিক নেই। কাকের
সংখ্যার চেয়ে বেশিসংখ্যক কবি থাকা সত্তে¡ও ভবিষ্যতে বড় কবির জন্ম হবে বলেও মনে হয় না। কারণ কবি তৈরি হয় বিরুদ্ধ
পরিবেশ-পরিস্থিতির মধ্যে জাতীয় স্বার্থ-আত্মারক্ষার সংগ্রামের প্রয়োজনে বিশাল
জনগোষ্ঠীকে ঐক্যবদ্ধ করার জন্য, কিছুতেই চৌর্যবৃত্তির সঙ্গে আপোস করে যেনযেন ভাবে বেঁচে থাকার জন্য নয়।
বর্তমান পরিস্থিতি হলো মুখে মুখে হাস্যরসের ছড়া কেটে রাজনৈতিক বাহবা কুড়োনোর
পরিস্থিতি।
ক্ষমতাসীন দলের অনেক নেতা
কিংবা চা স্টল গরম করা পথ বক্তাদের অনেকেই বলছেন: নূর কিছু না, জামাত-বিএনপির এজেন্ট। অন্য এমন আরেকজনের উচ্চকণ্ঠ
দেখে বিরোধীরা বলছেন: ওতো ক্ষমতাসীন সরকারের চেলা। এভাবে শুরুতেই যদি আপনারাই
তাদের ঠেলে দেন, ভাগ বাটোয়ারা করে দেন বিভিন্ন দলে উপদলে,
তাহলে নেতা গড়ে উঠবে কীভাবে?
স্বাধীনতার পূর্বে দেখেছেন:
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন ছাত্র কোথাও দাঁড়িয়ে কথা বলতে শুরু করলে সকল মতাদর্শের
জনতা তার কথা শোনার জন্য চারপাশে চুপচাপ দাঁড়িয়ে যেত, আর স্বাধীনতার পরে, এখন, তাদের এত বেশি অবমূল্যায়ণ হয়েছে যে,
সেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েরই ভিপি রাস্তায় কাঁদলেও কেউ তার
কান্না শুনতে চায় না। বলে ভঙ, রঙ-ঢঙ। কিন্তু আমি জোর দিয়ে বলছি: ছাত্রদের অবমূল্যায়ণ করে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবমূল্যায়ণ করে আপনারা
নিজেদেরই পায়ে কুড়াল মেরেছেন। বহুবহু বছরের ইতিহাস দেখুন, দেশীয় রাজনীতির কারণে অক্সফোর্ড-হার্বার্টের ওজন
একবিন্দুও কমেনি, আর আপনারা আপনাদের ‘প্রাচ্যের অক্সফোর্ড’ নামে খ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ওজন কমাতে কমাতে এর শির ধুলোয় মিশিয়ে
দিয়েছেন।
আমি বলছি, নিঃসন্দেহে আমি খুব ছোট মানুষ, হ্যাঁ, এর পরও চিৎকার করে বলছি, শুনে রাখুন: রবীন্দ্রনাথ, রাজনীতির বঙ্গবন্ধু আর ১৯৭১ এর জন্যই একদিন বাংলাদেশকে বিশ্ব চিনেছিল, সম্মান জানিয়েছিল। আজ রাজনৈতিক হীনতার জন্যই
বাংলাদেশের ইজ্জত সম্মান ধুলোয় মিশতে বসেছে। এখনও সময় আছে, বদলে যান,
নিজেকে শুধরে ফেলুন। খোল-নলচে বদলে ফেলুন রাজনীতির দর্শন ।
গাজী সাইফুল ইসলাম
কবি, অনুবাদক
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন