রবিবার, ১৬ মে, ২০২১

উপন্যাস ‘‘দর্শন বিশ্ববিদ্যালয়’’ গাজী সাইফুল ইসলাম

ভূমিকা: আমরা জানি যে, ‘‘উপন্যাসের কেনো ভূমিকার প্রয়োজন হয় না’’| তবু আমার এ উপন্যাসের একটি ভূমিকা লিখতে হচ্ছে। কারণ উপন্যাসটিতে পাঠকের প্রবেশের আগে কিছু ধারণা মাথায় রাখলে ভালো হবে। এর মূল গল্পের সঙ্গে আরও অসংখ্য গল্প ও প্রতিগল্প উপস্থাপিত হয়েছে সে সব নিয়ে দ্বন্দ্ব কলহের শেষ নেই। মত-প্রতিমত-বিরোধ, আপাত বিরোধ, স্ববিরোধ, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া এতে আছে। এমনকি পাগলের প্রলাপও এতে রয়েছে। বিশ্বাসী-অবিশ্বাসীর যুগ-জনমের দ্বন্দ্ব এর বাক্যে বাক্যে ছড়ানো। আমি শুধু তিনটি প্রশ্নের উত্তর খুঁজেছি। ‘‘আমি কে? কোথা থেকে এসেছি, কোথায় যাব?’’ ইসলামসহ সকল প্রধান ধর্মে এর সুনির্দিষ্ট উত্তর রয়েছে। কিন' বিজ্ঞানি ও দার্শনিকগণ যুগ যুগ ধরে নিজেদের মত করে এসব প্রশ্নের উত্তর খোঁজে গেছেন। কারণ তারা ধর্ম নির্ধারিত পথে যেতে চান নি। তারা, সংখ্যায় অনেক, ধর্মেই বিশ্বাস করেননি। এ উপন্যাসে আমি ধর্মবেত্তা ও দার্শনিকদের মতগুলো খুঁজেছি, জড়ো করেছি, সবার জন্য সহজপাঠ্য করেছি। সক্রেটিসের পদ্ধতি ছিল উত্তরের জন্য অপেক্ষা না করে বেশি বেশি প্রশ্ন করা। আমি প্রশ্ন করেছি উত্তরও খুঁজেছি। আর সবসময় চেয়েছি, না মানুক কিন' সবচেয়ে কাঙিক্ষত উত্তরটি মানুষ জানুক। ময়মনসিংহের প্রত্যন্ত এলাকা শাকুয়াই, সেখানে একটি উচ্চ বিদ্যালয় ও একটি কলেজ আছে। আমি সেখানে কংসের তীরে একটি দর্শন বিশ্ববিদ্যালয় কল্পনা করে নিয়েছি। আমার কথা, এতে ভর্তি হওয়ার জন্য ছাত্রদের নেই কোনো বয়সের কিংবা সিলেবাসের বাইনিন্ডংস। যে কেউ ইচ্ছে করলে ক্লাসে উপসি'ত থাকতে পারে, প্রশ্ন করতে পারে। বছর শেষে নিয়ম মেনে পরীক্ষা দিলেই মিলে দার্শনিকের সার্টিফিকেট। প্রতিটি মানুষ তার জায়গায় তার মত করে দার্শনিক। সবাই প্রকৃতির দর্শন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। এখানে-ওখানে বিশ্বের সর্বত্র। জীবনের ক্ষেত্রে প্রতিটি মানুষ তার মত করে দার্শনিক, কবি, বুদ্ধিজীবী। সবাই যদি সবার কথা লিখে রেখে যেত জগৎ গার্বেজ হয়ে যেত। কেউ কারুরটা পড়া তো দূরের কথা ফিরেও তাকাত না। আনন্দমোহন কলেজে পড়ার সময় ক্লাসে আমি স্যারদের, বিশেষ করে, দর্শন বিভাগের স্যারদের অনেক প্রশ্ন করতাম। আমার প্রশ্ন শুনে অনেকেই হাসত, কেউ কেউ ঠাট্টা করে আমায় দার্শনিক বলে ডাকত। পরে দেখলাম আমার এ নামটাই সকল বিভাগের ছাত্রদের মধ্যেও চালু হয়ে গেছে। আজ বহু বছর পর আমার সেইসব বন্ধুদের ঠাট্টার জবাব দিয়েছি এ দার্শন পটভূমির উপর এই উপন্যাস লিখে। কিন' আমি এ-ও জানি ‘‘কানা ছেলের নাম পদ্মলোচন‘‘ শুনতে ভালো লাগে না। “I don’t want to teach you philosophy but how to philosophize.’’ ছোট্ট এই বাক্যটি কবে কোথায় প্রথম পড়েছিলাম মনে নেই। কার লেখা তাও মনে নেই। কিন্তু পরে Teaching of Immanuel kant-G †c‡qwQ: “Not to learn philosophy, but rather how to philosophize…;’’ তাঁদের এমন সব বক্তব্য দ্বারা সারাজীবন আমি অণুপ্রাণিত হয়েছি। এই বইয়ে আমি আমার নিজের চিন্তা ও মত যত না দিয়েছি তার চেয়ে হাজারগুণ বেশি চিন্তা ও মত নিয়েছি দেশের সর্বসাধারণের। কারণ তারাই আমার টার্গেট চরিত্র। এ জন্য ফেসবুক বাহাসে দেখিয়েছি-তারা কী বলে? সকল পাঠকের প্রতি অনুরোধ এ বইকে ব্যক্তি, গোষ্ঠি অথবা কোনো মহুলের বিশেষের উদ্দেশ্যমূলক প্রচরাণা ধরে নেবেন না। আমি শুধু উপমহাদেশীয় দর্শনকে ইউরোপ, আমেরিকা, প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের দর্শনের আলোকে তুলে ধরার চেষ্টা চালিয়েছি। কাউকে আঘাত করা, হেয় বা ছোট করার চেষ্টা এতে হয়নি। সকল ধর্মের, বর্ণের সকল মানুষের মতের প্রতি শ্রদ্ধা এতে দেখানো হয়েছে। বিশ্ব হোক শান্তিপূর্ণ, সহবস'ানের পাদপিঠ। সকলের মুক্ত মতের প্রতিফলনে গড়ে উঠুক, প্রসারিত ও বিকশিত হোক আমাদের চিন্তার জগৎ। সকল শুভানুধ্যায়ী ও দর্শনগুরুদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে শেষ করছি আমার এ বক্তব্য, ধন্যবাদ। উৎসর্গ: তোমাকে হে যুবক! অমৃত সরোবর আত্মা তোমার উঠুক জেগে চাপাপড়া ভূয়াদর্শনের পাথরের নিচ থেকে মার খেও না চোখ বুজে বেওকুবি ও অলসতায় গা ভাসিয়ে অকর্মণ্য চিন্তায় সত্তার মহান ঝর্ণাকে বুকে চেপে রেখে।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন