বৃহস্পতিবার, ৪ মার্চ, ২০২১

Loiq Sher-Ali Or Layeq Sher Ali's poems in Bengali Translation

প্রখ্যাত তাজিক কবি লায়েক শের আলির কবিতা গাজী সাইফুল ইসলাম কবি লায়েক শের আলি (Loiq Sher-Ali Or Layeq Sher Ali) তাজিকিস্তানের(Tajikistan) প্রখ্যাত কবি, তবে শিরালি(Shir-Ali) নামে সমধিক পরিচিত। বিশ শতাব্দির পার্সিয়ান বিষয়ের তাত্ত্বিক, মধ্য এশিয়া ও তাজিকিস্তানের বিশিষ্ট সাহিত্য ব্যক্তিত্ব তিনি। জন্ম ১৯৪১ খ্রিস্টাব্দে, তাজিকিস্তানের ছোট্ট গ্রাম মাজার-ই-শরীফে (এটি আফগানিস্তানের চার বৃহত্তর শহরের একটি নয়)। এটি তাজিকিস্তানের পাঞ্জাকেন্ট জেলার সুঘাট এলাকায় অবসি'ত। মূলত স্বদেশী কবি আব্দুল্লাহ জাফর ইবনে মুহাম্মদ রুদাকির দ্বারা তিনি ব্যাপকভাবে প্রভাবিত এই কবির ওপর ফেরদৌসী, ওমর খৈয়ামর ও জালালুদ্দিন রুমিরও প্রভাব অনেক। তাঁর কবিতার বিষয়বস' বিচিত্র। সচরাচর মনে করা হয় তিনি একজন আনন্দোৎফুল্লতার কবি, দুঃখ ও অশ্রুর দেখা তার কবিতায় কদাচ দেখা যায়। তিনি বহু তাজিক মাস্টারপিস পার্সিয়ান ভাষায় অনুবাদ করেছেন। ১৯৯৪ সালে তাঁর নির্বাচিত কবিতা এবং ১৯৯৯ সালে তাঁর রাখÕস স্পিরিট ইরান থেকে প্রকাশিত হয়। কবি লায়েক শের আলির নাম আমি প্রথম পাই ইরানে নির্বাসিত প্রখ্যাত তাজিক বুদ্ধিজীবী মির্জা শাকুরজাদার (Mirzo Shakurzoda) তেহরান নিউজকে দেয়া একটি সাক্ষাৎকার থেকে। তিনি তাঁর Ôতাজিকস অন দ্য পাথ অব হিস্ট্রিÕ বইয়ে লিখেছেন: যুদ্ধ কোনো জাতিকে ঠেলে দেয় উন্নতির সর্বোচ্চ চূড়ায়, কোনটিকে আবার মুছে দেয় পৃথিবীর আলো থেকে। তাজিকিস্তানও এমন একটি প্রায় মুছে যাওয়া দেশ ও সভ্যতা। যদিও মানব সভ্যতার ইতিহাসে তাজিকিস্তানের রয়েছে গৌরবদীপ্ত সুখ্যাতি। জাতি হিসেবে তাজিকিরা অনন্যসৃজনশীল এবং অনুসন্ধিৎসু। প্রাচ্য সভ্যতার ভিত্তি তাদের দ্বারাই স'াপিত হয়েছিল। কিন' দুঃখজনক সত্য হলো প্রথম সোভিয়েতের কেন্দ্রীয় শাসক Ôআলেসামান ডাইনেস্টিÕ -এর সরকার ক্ষমতায় থাকাকালে যুদ্ধে তাজিকিস্তানের পতন ঘটে। আর তখনই চীনা যাযাবর সমপ্রদায়ের লোকেরা তাজিকিস্তানে আসে, যারা সোভিয়েত ইউনিয়ন খ--বিখ- না হওয়া পর্যন্ত সেখানে বিক্ষিপ্ত জীবনযাপন করে। আর তাদেরই কূটচালে তাজিকিস্তান ইরান থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় এবং অত্যাচারীদের বিরুদ্ধে সর্বদা তাদের যুদ্ধে লিপ্ত থাকতে হয়। এর পরের বাস্তবতা অত্যন্ত করুণ যা প্যাভলবের লেখা Ôরিলেটেড ফ্রম দি হিস্ট্রি অব তুর্কিস্তানÕ বইয়ে বর্ণিত হয়েছে। প্যাভলবকে বলা হয়, Ôদি রাশান কনকোয়ারারÕ। তিনি টুয়েন্টিথ সেঞ্চুরির তাজিকিস্তানের রাজনৈতিক ও সামাজিক অব¯’v সম্পর্কে লিখেছেন: Ôআমরা এখন সাক্ষ্য দিচ্ছি, কষ্টসহিষ্ণু, ন্যায়পরায়ণ এবং মেধাসম্পন্ন তাজিক জাতিটির পুনঃঅভ্যুদয়ের। তাঁরা এখন বড় কষ্টকর জীবন-যাপন করছে। তাঁদের দারিদ্র্য আর দুর্বলতার মূল কারণ তাঁরা যুদ্ধবিধ্বস্ত। এর জন্য দায়ী চেঙ্গিস খান, তৈমুর লং এবং উজবেক শিবানি সমপ্রদায়ের নেতা মেঙ্গিস (Mangheish)|Õ যুদ্ধবিধ্বস্ত তাজিকিস্তানের দুর্দশার চিত্র সেখানকার বহু কবির লেখায় মূর্ত হয়ে উঠেছে। আজ আমরা এখানে শের আলির কবিতার অনুবাদ তুলে ধরব। তাঁর সুপরিচিত একটি কবিতার অংশ নিম্নরূপ: ÔÔআনন্দের সঙ্গে নিজেকে আমি উৎসর্গ করতে পারি ও আমার শবাচ্ছাদন বস্ত্র ঢাকা স্বদেশ তুমি ছিলে আমার সম্মানের ঘর এখন হয়ে গেছ মৃত্যুপুরি...। এখন চারপাশে ভাসমান ফেনা তোমার বিদেশে কিংবা স্বদেশে কোথাও কেউ নেই যে শত্রুকে পরাজিত করতে পারে... আমরা পাহাড়ে আশ্রয় নিয়েছি ঘোড়াদের লেজ অনুসরণ করে হারিয়েছিও সব... এমনকি উপত্যকায় এবং সমতলে।’ কবি Ôলায়েক শের আলিÕর কবিতা বুঝতে হলে যুদ্ধবিধ্বস্ত তাজিকিস্তানের জীবন বাস্তবতার চিত্রটি মাথায় রাখতে হবে। যেমন: একবার আপনি বলেছেন: ÔÔতুমি একজন ইরানী, এরপর বলেছেন: তুমি একজন তাজিকÕ হয়তো সেও মরবে মূল থেকে বিচ্যুত হয়েই, যে আমাদের করেছে বিচ্যুৎ।ÕÕ ২০০১ সালে তার সম্পূর্ণ রচনাকর্ম প্রকাশিত হয়েছে সিরিলিক ও ফার্স স্ক্রিপ্টে। লায়েক শের আলিÕর কবিতা যদি তুমি যদি তুমি আমায় হাসাতে না পারো, কাঁদিও না সাহায্য করতে না পারো, আঘাত করো না যদি তুমি আমায় সুখী করতে না পারো, খুশির কথা স্মরণ করিয়ে দিও না যদি আনন্দ দিতে না পারো, চোখে অশ্রু ঝরিও না। জীবনের চতুর্কোণ থেকে জীবনের পথে যদি রক্ষাকারী হতে না পারো, আক্রমণকারী হইও না যদি বেসামাল না হয়ে থাক, হতে চেষ্টা করো না। ভ-ামি আর প্রতারণা দিয়ে, আমায় বোকা বানানোর চেষ্টা করো না। তোমার শরীরে কোনোই বেদনা থাকে না যখন যখন ভালোবাসো তোমার দুÕহাত খালি, আমার হাতও খালি করো না তুমি পৃথিবী দেখোনি, আমার কাছে পৃথিবীর শপথ করো না তুমি সাগর দেখোনি, ঝড়ের জন্য আমায় তৃষ্ণার্ত করো না। (মূল তাজিকি থেকে ইংরেজি অনুবাদ) ওহ নির্বাক বৃক্ষ ওহ নির্বাক বৃক্ষ তুমি নিজেই কুঠারটিকে একটি হাতল দিন যাতে সেটি তোমার মূল কাটতে পারে। সে তোমায় কাটে সে তোমায় নিয়ে যায় এটা পৃথিবীর কেমন নিয়ম? ফাঁসিরকাষ্ঠ তৈরি হয় তোমার কাঠ থেকে শবাধার তৈরি হয় তোমার কাঠ থেকে ওহ নির্বাক বৃক্ষ পাতারা কি তোমার জিহ্বা নয়? কী তোমার পরিচয় যতদিন তুমি পাহাড়ে কিংবা উপত্যকায় নিরাপদে থাকবে মাথা আর হাতের একটা যাযাবর বোঝা ছাড়া কী তোমার পরিচয়? একটি শহর, নৌকো বা গোসলখানা কিংবা কোনো পুরস্কার কিছুই পেলে না- দরবেশের জীবনে বাঁচলে শুধু লুকিয়ে গুহা-অরণ্যে। মায়ের স্তনের পর সমরখন্দ বুখারা থেকেও সরেছ দূরে হায়, কোথায় তোমার প্রিয় বাস'ভিটে? কুৎসিতমুখো বর্বরদের পাথরের লক্ষ্যবস' তুমি পাহাড়ের কাঁটাওয়ালা ঝোঁপের লক্ষ্যবস' তুমি সংকীর্ণ হৃদয় পৃথিবীর চোখ দেখছে না হৃদয়ের বন্ধনহীন বুদ্বুদ তোমার। তবু উন্নত মনোভূমিতেই বিচরণ করছ তুমি কতবার ওরা কেটে দিয়েছে তোমার কণ্ঠ, তোমার পা তবু উচ্চারণ কত স্পষ্ট তোমার, পা দুÕটিও অগ্রসরমান এবং যদি অর্ধমৃত থেকে থাক। উঠে দাঁড়াও। আমি শুনাচ্ছি তোমায় রুদাফির কবিতা এবং মিনার ভার্স তারপরও যদি তোমার শরীর এবং বিশ্বাস শুদ্ধ থেকে থাকে ধন্যবাদ দেব হাফিজ আর রুমির কবিতাকে|

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন