সোমবার, ২৮ ডিসেম্বর, ২০২০

 A Homeopathic Case of Tubercular Miasm

একটি গুরুত্বপূর্ণ কেস

কাজল সরকার, বাড়ি বিরামপুর, ফুলপুর(ময়মনসিংহ) সাবরেজিস্টার অফিসের দলিল লেখক।

২০২০ এর ১৯ মার্চ তিনি প্রথম আমার কাছে আসেন। তার সর্দিজ সমস্যার জন্য।

১। হালকা জ্বর থাকে।

২। নাক দিয়ে ঘন পঁচা গন্ধযুক্ত সর্দি ঝরে।

৩। সর্দির সঙ্গে মিলেমিশে রক্ত থাকে। নাকের ভেতরের গোড়ায় ফুস্কুড়ির মত হয়। কয়েকমাস ধরে সমস্যাটি বাড়ছেই। কোনো চিকিৎসা নিচ্ছেন না। দেখছেন কী হয়। একটি বড় রোগের আশঙ্কা করে পরিবারের কাছেও গোপন করে যাচ্ছেন। এরই মধ্যে হঠাৎ সর্দির সঙ্গে বেশি রক্ত দেখে একাই সিদ্ধান্ত নিয়ে ময়মনসিংহ শহরের ৮০০ টাকা ভিজিটের একজন নামকরা চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলেন। তিনি রক্তের কিছু পরীক্ষার সঙ্গে সিটিস্ক্যানের পরামর্শ দেন। রিপোর্ট পাওয়ার পর আবার ডাক্তার দেখানোর কথা। কিন্তু রাত বেশি হয়ে যাওয়ায় ডাক্তার না দেখিয়ে বাড়ি চলে আসেন এবং পরদিন রিপোর্ট নিয়ে আসেন আমার কাছে সুপরামর্শ পাবার আশায়। তার ইচ্ছা, হোমিওপ্যাথিতে চিকিৎসা থাকলে তিনি আগে হোমিওপ্যাথি চিকিৎসাই করাবেন। 

আমি তাকে ধন্যবাদ আর অভয় দিলাম। বললাম: আগে হোমিওপ্যাথিতে আসায় চিকিৎসা সহজসাধ্য ও কম সময়সাপেক্ষ হবে। আমার বিশ্বাস কিছুদিনের মধ্যেই আপনি সম্পূর্ণ আরোগ্য লাভ করবেন। একটু আক্ষেপ করলাম এই বলে যে, আমাদের কাছে সাধারণত রোগী আসে তিনজন কবিরাজ আর পাঁচজন অ্যালোপ্যাথ দেখানোর পর, যখন থাকে না কোনো গতি। যাহোক,

কাজল সরকারের সংক্ষিপ্ত পারিবারিক ইতিহাস:

তার বাবা একশবছরের ওপরে বয়স, এখনও ভালো আছেন। শারীরিক গড়ন হালকা পাতলা ধরনের, একমাত্র চিন্তা এক পুত্র কাজল সরকার ও তার দুসন্তান ভবিষ্যৎ নিয়ে। সবসময় উচ্চাকাক্সক্ষী। নিজের ব্যাপারে অতি আত্মপ্রত্যয়ী। ভবিষ্যৎবাণী করেন ২০২১ সালের অমুক মাসের অমুক তারিখে তিনি মৃত্যুবরণ করবেন। বছর দুয়েক আগে তার নিচের চোঁয়ালে অনৈচ্ছিক কম্পন হত হোমিওপ্যাথিতে সেরেছে/উপকার হয়েছে।

মা ও ছয় বোনের সবাই জীবিত। মায়ের শরীরে বাত(সাইকোসিস) ব্যথা আছে। সোজা হয়ে দাঁড়াতে পারেন না। মেরুদ- বাঁকা (কুঁজো-টিউবারকুলার দোষ) হয়ে গেছে।

কাজল সরকারের দুসন্তানের ছোটটির বয়স ১৩-১৪ বছর, নাকে মাংষ বৃদ্ধিও (সাইকোসিস)সমস্যা আছে।

সার্বিক বিবেচনায় কাজল সরকারের জন্য মায়াজমেটিক ওষুধ নির্বাচন করা হলো: টিউবারকুলিনাম। সঙ্গে কিছুদিনের স্যাকল্যাক। বলা হলো: দুমাস পর দেখা করার জন্য।

দুমাসের আগেই কাজল সরকার ফোনে ও সাক্ষাতে তার সমস্যার কথা জানাল: বেশ ভালো লাগছে। ২৫-৩০ দিনের মধ্যেই নাকের ভেতর থেকে ফুস্কুড়ি চলে গেছে। সর্দির সমস্যা থাকলেও রক্ত নেই। জ্বরটা আগের মত অনুভূত হয় না।

১০-০৫-২০

নতুন করে সর্দি লেগেছ, হালকা কাশি। শরীরে ব্যথা। জ্বর জ্বর লাগছে।

বর্ষা শেষ হলেও যখন তখন বৃষ্টি হচ্ছিল। তিন-চার দিন ধরে আবহাওয়া একনাগারে খারাপ যাচ্ছে। কাজল সরকার জানাল, বৃষ্টিতে ভিজেনি, তবে ঠা-া বাতাস আর বৃষ্টির ফোঁটা তো শরীরে লেগেছেই।

রাস টক্স সিলেকশন করা হলো। টিউবারতুলিনামের মত রাস টক্সও হাইড্রোজেনয়ড ধাতুর ওষুধ।

এরপর চলে গেল দুমাস।

১০-০৭-২০ কাজল সরকার এলো। জানাল: বেশ ভালোই আছি। কিন্তু কেন যেন মনে হয় প্রথমবারের ওষুধের মত উন্নতি হচ্ছে না। মাঝেমধ্যেই নাকে কিছু কিছু অস্বস্তি হয়। তবে রক্ত, ফুস্কুড়ি নেই, সর্দিও আগের মত বিরক্তিকর নয়। মাঝেমধ্যে, বিশেষ করে কিছু খাবার খেলে অ্যালার্জিক রেশ দেখা দেয় শরীরে।

আর্টিকা ইউরেন্স ২০০ শক্তিতে।

১৫-১০-২০ তারিখ সকালে কাজল সরকারের ফোন। আমি জরুরি ভিত্তিতে আপনার সঙ্গে দেখা করতে বিকেলে আসছি। যথারীতি বিকেলে কাজল সরকার ফুলপুরের চেম্বারে এলো।

-কী সমস্যা?

-অবস্থা খুব খারাপ। সকালের দিকে আগের মত নাক দিয়ে পচা গন্ধযুক্ত সর্দি ঝরেছে। সামান্য রক্তও ছিল। ভয় হচ্ছে আগের মত হয়ে যায় কিনা। মনে হলো, সর্দি না পুঁজ। ও হ্যাঁ, আগে একবার এক ডাক্তার আমায় বলেছিল: আমার সাইনাসের সমস্যা আছে।

-আমি জানি। এরপরও বলে রাখছি: আমরা রোগের নামে চিকিৎসা করি না। রোগীর চিকিৎসা করি। আমি মনে করি: আপনি সুস্থ হওয়ার পথে। শরীরে অ্যালার্জিক রেশ ওঠে?

-না।

-ঠিক আছে। আর মাত্র কদিনের অপেক্ষা।

আরও উচ্চ শক্তিতে টিউবারকুলিনাম দেওয়া হলো।

১০-১১-২০

কাজল সরকার শেষবার ওষুধ নিতে এলেন। কোনো সমস্যা নেই। তবে নাকটা শুকনো শুকনো লাগে, হালকা চুলকানির ভাব থাকে।

সালফার ৩০।

ডিসেম্বর শেষ হতে চলল। কাজল সরকারের কোনো সমস্যা নেই। আশা করি আরা সমস্যা হবেও না।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন