সোমবার, ২৮ ডিসেম্বর, ২০২০

 A Homeopathic Case of Tubercular Miasm

একটি গুরুত্বপূর্ণ কেস

কাজল সরকার, বাড়ি বিরামপুর, ফুলপুর(ময়মনসিংহ) সাবরেজিস্টার অফিসের দলিল লেখক।

২০২০ এর ১৯ মার্চ তিনি প্রথম আমার কাছে আসেন। তার সর্দিজ সমস্যার জন্য।

১। হালকা জ্বর থাকে।

২। নাক দিয়ে ঘন পঁচা গন্ধযুক্ত সর্দি ঝরে।

৩। সর্দির সঙ্গে মিলেমিশে রক্ত থাকে। নাকের ভেতরের গোড়ায় ফুস্কুড়ির মত হয়। কয়েকমাস ধরে সমস্যাটি বাড়ছেই। কোনো চিকিৎসা নিচ্ছেন না। দেখছেন কী হয়। একটি বড় রোগের আশঙ্কা করে পরিবারের কাছেও গোপন করে যাচ্ছেন। এরই মধ্যে হঠাৎ সর্দির সঙ্গে বেশি রক্ত দেখে একাই সিদ্ধান্ত নিয়ে ময়মনসিংহ শহরের ৮০০ টাকা ভিজিটের একজন নামকরা চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলেন। তিনি রক্তের কিছু পরীক্ষার সঙ্গে সিটিস্ক্যানের পরামর্শ দেন। রিপোর্ট পাওয়ার পর আবার ডাক্তার দেখানোর কথা। কিন্তু রাত বেশি হয়ে যাওয়ায় ডাক্তার না দেখিয়ে বাড়ি চলে আসেন এবং পরদিন রিপোর্ট নিয়ে আসেন আমার কাছে সুপরামর্শ পাবার আশায়। তার ইচ্ছা, হোমিওপ্যাথিতে চিকিৎসা থাকলে তিনি আগে হোমিওপ্যাথি চিকিৎসাই করাবেন। 

আমি তাকে ধন্যবাদ আর অভয় দিলাম। বললাম: আগে হোমিওপ্যাথিতে আসায় চিকিৎসা সহজসাধ্য ও কম সময়সাপেক্ষ হবে। আমার বিশ্বাস কিছুদিনের মধ্যেই আপনি সম্পূর্ণ আরোগ্য লাভ করবেন। একটু আক্ষেপ করলাম এই বলে যে, আমাদের কাছে সাধারণত রোগী আসে তিনজন কবিরাজ আর পাঁচজন অ্যালোপ্যাথ দেখানোর পর, যখন থাকে না কোনো গতি। যাহোক,

কাজল সরকারের সংক্ষিপ্ত পারিবারিক ইতিহাস:

তার বাবা একশবছরের ওপরে বয়স, এখনও ভালো আছেন। শারীরিক গড়ন হালকা পাতলা ধরনের, একমাত্র চিন্তা এক পুত্র কাজল সরকার ও তার দুসন্তান ভবিষ্যৎ নিয়ে। সবসময় উচ্চাকাক্সক্ষী। নিজের ব্যাপারে অতি আত্মপ্রত্যয়ী। ভবিষ্যৎবাণী করেন ২০২১ সালের অমুক মাসের অমুক তারিখে তিনি মৃত্যুবরণ করবেন। বছর দুয়েক আগে তার নিচের চোঁয়ালে অনৈচ্ছিক কম্পন হত হোমিওপ্যাথিতে সেরেছে/উপকার হয়েছে।

মা ও ছয় বোনের সবাই জীবিত। মায়ের শরীরে বাত(সাইকোসিস) ব্যথা আছে। সোজা হয়ে দাঁড়াতে পারেন না। মেরুদ- বাঁকা (কুঁজো-টিউবারকুলার দোষ) হয়ে গেছে।

কাজল সরকারের দুসন্তানের ছোটটির বয়স ১৩-১৪ বছর, নাকে মাংষ বৃদ্ধিও (সাইকোসিস)সমস্যা আছে।

সার্বিক বিবেচনায় কাজল সরকারের জন্য মায়াজমেটিক ওষুধ নির্বাচন করা হলো: টিউবারকুলিনাম। সঙ্গে কিছুদিনের স্যাকল্যাক। বলা হলো: দুমাস পর দেখা করার জন্য।

দুমাসের আগেই কাজল সরকার ফোনে ও সাক্ষাতে তার সমস্যার কথা জানাল: বেশ ভালো লাগছে। ২৫-৩০ দিনের মধ্যেই নাকের ভেতর থেকে ফুস্কুড়ি চলে গেছে। সর্দির সমস্যা থাকলেও রক্ত নেই। জ্বরটা আগের মত অনুভূত হয় না।

১০-০৫-২০

নতুন করে সর্দি লেগেছ, হালকা কাশি। শরীরে ব্যথা। জ্বর জ্বর লাগছে।

বর্ষা শেষ হলেও যখন তখন বৃষ্টি হচ্ছিল। তিন-চার দিন ধরে আবহাওয়া একনাগারে খারাপ যাচ্ছে। কাজল সরকার জানাল, বৃষ্টিতে ভিজেনি, তবে ঠা-া বাতাস আর বৃষ্টির ফোঁটা তো শরীরে লেগেছেই।

রাস টক্স সিলেকশন করা হলো। টিউবারতুলিনামের মত রাস টক্সও হাইড্রোজেনয়ড ধাতুর ওষুধ।

এরপর চলে গেল দুমাস।

১০-০৭-২০ কাজল সরকার এলো। জানাল: বেশ ভালোই আছি। কিন্তু কেন যেন মনে হয় প্রথমবারের ওষুধের মত উন্নতি হচ্ছে না। মাঝেমধ্যেই নাকে কিছু কিছু অস্বস্তি হয়। তবে রক্ত, ফুস্কুড়ি নেই, সর্দিও আগের মত বিরক্তিকর নয়। মাঝেমধ্যে, বিশেষ করে কিছু খাবার খেলে অ্যালার্জিক রেশ দেখা দেয় শরীরে।

আর্টিকা ইউরেন্স ২০০ শক্তিতে।

১৫-১০-২০ তারিখ সকালে কাজল সরকারের ফোন। আমি জরুরি ভিত্তিতে আপনার সঙ্গে দেখা করতে বিকেলে আসছি। যথারীতি বিকেলে কাজল সরকার ফুলপুরের চেম্বারে এলো।

-কী সমস্যা?

-অবস্থা খুব খারাপ। সকালের দিকে আগের মত নাক দিয়ে পচা গন্ধযুক্ত সর্দি ঝরেছে। সামান্য রক্তও ছিল। ভয় হচ্ছে আগের মত হয়ে যায় কিনা। মনে হলো, সর্দি না পুঁজ। ও হ্যাঁ, আগে একবার এক ডাক্তার আমায় বলেছিল: আমার সাইনাসের সমস্যা আছে।

-আমি জানি। এরপরও বলে রাখছি: আমরা রোগের নামে চিকিৎসা করি না। রোগীর চিকিৎসা করি। আমি মনে করি: আপনি সুস্থ হওয়ার পথে। শরীরে অ্যালার্জিক রেশ ওঠে?

-না।

-ঠিক আছে। আর মাত্র কদিনের অপেক্ষা।

আরও উচ্চ শক্তিতে টিউবারকুলিনাম দেওয়া হলো।

১০-১১-২০

কাজল সরকার শেষবার ওষুধ নিতে এলেন। কোনো সমস্যা নেই। তবে নাকটা শুকনো শুকনো লাগে, হালকা চুলকানির ভাব থাকে।

সালফার ৩০।

ডিসেম্বর শেষ হতে চলল। কাজল সরকারের কোনো সমস্যা নেই। আশা করি আরা সমস্যা হবেও না।

সোমবার, ২ নভেম্বর, ২০২০

Robert Fisk, Veteran British foreign correspondent, died aged 74

 

রবার্ট ফিস্ক: দি ইন্ডিপেনডেন্ট (ইউকে)-এর মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক সংবাদদাতা

 গাজী সাফুল সলাম

রবার্ট ফিস্ক (Robert Fisk) প্রসঙ্গে: রবার্ট ফিস্ক লেখক, সাংবাদিক। লন্ডনের দি ইন্ডিপেনডেন্ট পত্রিকার মধ্যপ্রাচ্যবিষয়ক সংবাদদাতা। গত ২৫ বছর ধরে তিনি ওই অঞ্চলের রাজনীতির প্রত্যক্ষদর্শী বিবরণদাতা। তিনিই বিশ্বের একমাত্র সাংবাদিক যিনি এত দীর্ঘদিন ধরে বিশ্বের সবচেয়ে সমস্যাসংকুল স্থানের ওপর রিপোর্ট করছেন। ওই অঞ্চলের গত ৫০ বছরের রক্তক্ষরণ আর ট্র্যাজেডির জীবন্ত সাক্ষী তিনি। তিনি খুব কাছে থেকে প্রত্যক্ষ করছেন ফিলিস্তিনি-ইসরাইল সংঘাতজনিত রক্তপাতের সহিংস ঘটনাক্রম এবং তারই ফলশ্রতি আর ধারাবাহিকতায় ইরাকের বিরুদ্ধে আজকের যে যুদ্ধ। মি. ফিস্ক সম্প্রতি দি গ্রেট ওয়ার ফর সিভিলাইজেশনবইটি লিখে বিশ্বে আলোড়ন তুলেছেন। বিশ্বসাহিত্যের বোদ্ধারা বলছেন, তিনি বইটি লিখেছেন দীর্ঘদিনের অপেক্ষার পর একান্ত আবেগ আর ক্ষোভ তাড়িত হয়ে। তাঁর এ বইটিকে একজন রিপোর্টারের মধ্যপ্রাচ্যের ইতিহাসের প্রত্যক্ষদর্শীর নিরপেক্ষ বিবরণ বলা যায়। তাঁর চোখের সামনে যা ঘটেছে তাই তিনি তুলে ধরেছেন সাংবাদিকের কলমে। তিনি গত শতাব্দির মধ্যপ্রাচ্যের সবচেয়ে আলোচিত ব্যক্তিত্ব আয়তুল্লা খোমেনি, ওসামা বিন লাদেন থেকে ইয়াসির আরাফাত, সাদ্দাম হোসেন পর্যন্ত সবারই সংস্পর্শে গিয়েছেন। তাঁর বইয়ের পৃষ্ঠায় পৃষ্ঠায় তাঁরা জীবন্ত হয়ে ওঠেছেন। তিনি তিনবার লাদেনের সাক্ষাৎকার নিয়েছেন, একবার সুদান থেকে, দুবার আফগানিস্তান থেকে। একবার লাদেনের সাক্ষাৎকার নিতে গিয়ে আফগানিস্তানে গেরিলা ক্যাম্পে রাত কাটিয়েছেন।



রক্তপাত আর গণহত্যার বর্ণনা দিতে গিয়ে তিনি দেখিয়েছেনÑকীভাবে দিনে দিনে মুসলিম বিশ্ব ঘৃণা ও আক্রোশে ফুঁসে উঠছে পশ্চিমা বিশ্বের বিরুদ্ধে; মধ্যপ্রাচ্যের অনেক একনায়কের প্রতি পশ্চিমাদের পক্ষপাতিত্ব এবং আমেরিকা-ব্রিটেনের বিশাল সেনাবাহিনীর বিলম্বিত অবস্থানের কারণে মধ্যপ্রাচ্য কীভাবে আজ বিশ্বের সবচেয়ে ভয়ানক স্থানে পরিণত হয়েছে। এবং পশ্চিমাদের সমালোচনাহীন নিঃশর্ত সমর্থনে বেপরোয়া হয়ে উঠা ইসরাইল কীভাবে দখলদারিত্ব চালিয়ে যাচ্ছে অধিকৃত ফিলিস্তিনি ভূমির ওপর। যুদ্ধক্ষেত্র থেকে প্রেরিত এক একটি গল্পে চিরতরে হারিয়ে যাওয়া তাঁর সহকর্মীদের ক্ষোভ, হতাশা, উদ্বেগ ও হাস্যরস অসামান্য দক্ষতায় তিনি চিত্রিত করে বিশ্বের সামনে তুলে ধরছেন প্রতিদিন। তাঁর মতে, সাংবাদিকরাই ইতিহাসের প্রথম খসড়াটি রচনা করেন। সেখানে থাকে দুর্বলতা, ভীরুতা, সাহসিকতা ও সত্যবাদিতার মর্মস্পর্শী বিবরণ। তাঁর মতে, ‘দি গ্রেট ওয়ার ফর সিভিলাইজেশনপড়লে পাঠক অবশ্যই বুঝবেন কেন ১৯ জন আত্মঘাতী বৈমানিক ১১ সেপ্টেম্বর আমেরিকার ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে বদলে দিল পৃথিবী।

বর্তমানের আজকের এ দিনটি পর্যন্ত অহরহ বোমা-ফতাঁ বাগদাদের বুকে বসে রিপোর্ট পাঠাতে গিয়ে মি. ফিস্ক পরীক্ষা করছেন যে ঘটনা প্রবাহ কোয়ালিশন বাহিনীকে ইরাকে প্রবেশ করিয়েছে। তাঁর মতে, ইরাকে এই বাহিনীর অবস্থান যত দীর্ঘস্থায়ী হবে তত দীর্ঘস্থায়ী ফলাফলের জন্য আমেরিকা তথা পশ্চিমা বিশ্বকে প্রস্তুত থাকতে হবে।

 

 দি প্রোগ্রেসিভ ইন্টারভিউ

 ১১ সেপ্টেম্বর ২০০১, যুক্তরাষ্ট্রের ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টার এবং টুইন টাওয়ারে সন্ত্রাসী হামলার একদিন পর ১৩ সেপ্টেম্বর, লন্ডনের দি ইন্ডিপেনডেটে পত্রিকার ইন্টারনেট সূত্রের বরাত দিয়ে বিশ্বের অসংখ্য পত্রিকা রবার্ট ফিস্কের যে লেখাটি ছেপেছিল তাতে ডবিউ. এইচ ওডেনের সেপ্টেম্বর ১, ১৯৩৯ কবিতাটির শেষ দুটি লাইনের উদ্ধৃতি ছিল।

‘‘সকল কথার এক কথা আমাদের

গুটাতে হবে সব বাক্স মিথ্যাচারের।’’

তিনিও কবি অডেনের মতো মিথ্যাচারের বিরুদ্ধাচরণ করতে তাঁর কলমকে করেছেন উচ্চকিত। দি প্রোগ্রেসিভ-এর সম্পাদক ম্যাথিউ রুথস্কিলড দুবার মি. ফিস্কের সাক্ষাতকার গ্রহণ করেছেন। প্রথমবার ১৯৯৮ সালে, দ্বিতীয়বার ২৪ অক্টোবর ২০০১। দ্বিতীয়বার মি. ম্যাথিউ ইসলামাবাদের একটি হোটেলে একঘণ্টা পঁয়তাল্লিশ মিনিট ধরে ফিস্কের সঙ্গে কথা বলেন। মি. ফিস্কের প্রশংসা করে তিনি বলেন, সরেজমিনে প্রত্যক্ষ করা রিপোর্টে তিনি জুড়ে দেন তীক্ষ্ণ বিশ্লেষণ। সর্বান্তঃকরণেই তিনি একজন গল্প বলনেওয়ালা। আমার সঙ্গে কথা বলার ফাঁকে ফাঁকেও তিনি তাঁর নোট বই দেখে নিয়েছেন যাতে কোনো ভুল তথ্য পরিবেশিত হয়ে না যায়। তিনি তাঁর বক্তব্যে শেষের দিকে ব্রিটিশ যুদ্ধবিরোধী কবি সিগফ্রেড স্যাসুনের একটি কবিতার উদ্ধৃতি দেন এবং বিদায় বেলায় উদ্ধৃতি দেন অডেনের এপিটাফ অন এ টাইর‌্যান্টকবিতা থেকে। এ কবিতাটি অডেন লেখেছিলেন স্ট্যালিনের উদ্দেশে। মি. ফিস্ক বললেন, কবিতাটি স্ট্যালিনের উদ্দেশে লিখা হলেও সাদ্দাম হোসেনের ক্ষেত্রে এটি খুবই প্রযোজ্য। অডেন লিখেছিলেন, ‘‘যখন তিনি (স্ট্যালিন) হাসেন, মান্যবর সভাসদগণ কান্নায় ভেঙে পড়েন। আর যখন তিনি কাঁদেন, ছোট শিশুরা রাস্তায় মারা পড়ে।’’ অপারেটর লাইন বিচ্ছিন্ন করে দিলে মি. ফিস্ক বললেন, ‘‘ম্যাথিউ, এবার তো আমাদের কবিতার পর্ব সমাপ্ত করতেই হয়।’’ রবার্ট ফিস্কের সঙ্গে ম্যাথিউ রুথস্কিলডের সাক্ষাৎকারের অধিক গুরুত্বপূর্ণ এবং প্রাসঙ্গিক প্রশ্নের উত্তরগুলোই এখানে তুলে ধরা হলো।

 

সাক্ষাৎকার

 

প্রশ্ন: সেপ্টেম্বর ১১ হামলার খবর যখন প্রথম শুনলেন কোথায় ছিলেন আপনি?

উত্তর: আমি আসলে তখন একটি যাত্রিবাহী বিমানে ছিলাম। আটলান্টিক পার হয়ে ইউরোপের আকাশে তখন বিমানটি চক্কর দিচ্ছিল। হঠাৎ আমার অফিস থেকে ফোন এলো। অপর প্রান্ত থেকে জানাল, এইমাত্র দেখা গেছে দুটি হাইজ্যাককৃত বিমান ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারে ঢুকে পড়েছে। তৎক্ষণাৎ পেছন দিকে ঘুরে আমি ক্রুদের ঘটনাটা জানালাম। তারা গিয়ে জানাল ক্যাপটেনকে। ক্যাপটেন বেরিয়ে এসে জানতে চাইলেন আমি কী জানি। এরপর আরও কিছুক্ষণ চক্কর দিয়ে বিমানটি চলতে শুরু করল। আবার আটলান্টিকের ওপর চলে এলাম আমরা। পাইলট ব্রাসেলসের সঙ্গে কথা বলল। এরপর কো-পাইলট বেরিয়ে এসে আমাকে বলল, ব্রাসেলস কী জানিয়েছে। এরপরই জানা গেল একটি বিমান যে কারণেই হোক পেনসিলভেনিয়ার ভূমিতে বিধ্বস্ত হয়েছে। এ অবস্থায় আমাদের বিমানটি দ্রুত ফ্রান্সে অবতরণ করল। ওটি ছিল একটি যাত্রিবাহী ফরাসি বিমান। ওখান থেকে জানানো হলো, আমেরিকা তার সব বিমান অবতরণ স্টেশন বন্ধ করে দিয়েছে। ফলে আমাদের আবার ইউরোপেই অবস্থান করতে হবে। আমরাও তাই করলাম।

প্রশ্ন: আপনি কি মনে করেন ওই আক্রমণের জন্য ওসামা বিন লাদেনই দায়ী?

উত্তর: যখন কোথাও মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ সংঘটিত হয় তখন ধরে নিতে হবে এর পেছনে গুরুতর কোনো কারণ রয়েছে। আর এ সম্পর্কে কথা বলতে হলে অবশ্যই চারদিকে তাকাতে হবে এবং পারিপার্শি¦কতা বিবেচনা করতে হবে। এখন আমাদের দেখতে হবে -কে সম্প্রতি আমেরিকার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছিল? আর এ দিক থেকে চিন্তা করলে তো লাদেনকেই দায়ী করতে হয়।

সেব্রেনিকার ম্যাসাকারে নিউ ইয়র্কের চেয়ে কিছু বেশি ৭০০০ লোককে হত্যার দায়ে আমরা সার্বদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করলাম, তাদের কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে দোষী সাভ্যস্ত করে বিশ্বের সামনে তুলে ধরলাম। কিন্তু বিন লাদেন এবং তার বন্ধুদের বিচারের মুখোমুখি করার উদ্দেশ্যে কোনো পরিকল্পনা গ্রহণ করলাম না।

প্রশ্ন: লাদেনের বিরুদ্ধে  আপনি কী প্রমাণ দাঁড় করাতে পারেন?

উত্তর: আমি বেশ আহতবোধ করেছিলামÑকলিন পাওয়েল যখন বললেন  আমার কাছে প্রমাণ আছে। কিন্তু তিনি তা দেখাতে পারলেন না। আবার টনি বেয়ার ৭০টা প্যারাগ্রাফের একটা দলিল উপস্থাপন করলেন, যার মাত্র শেষ নপ্যারায় উল্লেখ ছিল ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারের কথা। কিন্তু নিজেরাই তারা সন্দেহমুক্ত ছিল না। ফলে আমাদের জন্য একটি ছোট্ট সমস্যা দেখা দিলো। বলতে হলো, যদি তাদের দোষী বলেন তাহলে প্রমাণ দেখান। যদি কোনো প্রমাণই দাঁড় করাতে না পারেন তাহলে যুদ্ধ করতে যাচ্ছেন কেন?

প্রশ্ন: যুদ্ধের শুরুতে আপনি বলেছিলেন যুক্তরাষ্ট্র অবশ্যই ফাঁদে পা  দিতে যাচ্ছে। ও কথা দ্বারা আপনি কী বোঝতে চেয়েছিলেন?

উত্তর: আমি বোঝাতে চেয়েছিলাম, ওই হামলার পেছনে যদি সত্যি মি. লাদেন থেকে থাকেন, তাহলে-যুদ্ধ হবে যুক্তরাষ্ট্রের জন্য একটি ফাঁদ। মি. লাদেন খুবই চতুর লোক। তিনি দীর্ঘ সময়ের জন্য যুদ্ধের পরিকল্পনা করে এগোচ্ছেন। আমার মনে পড়ছে,  ১৯৭৭ সালে শেষবার যখন আফগানিস্তানে তাঁর সঙ্গে আমি মিলিত হই, তখন খুব ঠাণ্ডা। ভোরে যখন তাঁবুতে আমার ঘুম ভাঙল, দেখলাম, শীতে আমার চুল জমে গেছে। ২৫ ফুট প্রস্থ এবং ২৫ ফুট উঁচু একটি ঘরে আমরা বসলাম। ওটি ছিল পাথরের ব্লক দিয়ে তৈরি আর বাতাসের প্রবাহমুক্ত পাহাড়ের ঘর। রাশিয়াকে আফগানিস্তান থেকে বিতাড়িত করার উদ্দেশ্যে লাদেন তখন যুদ্ধ করছেন। তিনি আমাকে বললেন, (তিনি অত্যন্ত সতর্কতা অবলম্বন করছিলেন এবং আমি যা লিখছিলাম তাকিয়ে তাকিয়ে দেখছিলেন), এ পর্বত থেকে মি. ফিস্ক, এখন আপনি যেখানে বসে আছেন, আমি রাশিয়ার সেনাবাহিনীর ওপর আক্রমণ পরিচালনা করছি। এবং একদিন সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে দিয়েছি। আর এখানে বসেই মহান আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করি, তিনি যেন আমাদের কবুল করেন। আমরা যেন আমেরিকাকে তার ছায়ার দিকে ফেরাতে পারি। আজ যখন ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টার ছাড়া নিউ ইয়র্কের ছবি দেখছি, নিউ ইয়র্ককে তারই একটি ছায়ার মতো মনে হচ্ছে। লাদেন ভালো পড়তে পারেন না। আবার তিনি খুব বাস্তব বুদ্ধিসম্পন্ন ব্যক্তিও নন। কিন্তু তিনি এমন ঠা-া মাথায় পরিকল্পনা করেন যার জন্য আমেরিকার প্রস্তুতিই থাকে না। আমি নিশ্চিন্ত, লাদেন চাইছেন আমেরিকাকে আফগানিস্তানে প্রবেশ করাতে। আপনি একদিন তাই করবেন যা আপনার শত্রু চাইবে। আপনি একটি ফাঁদের দিকে পা বাড়িয়েছেন আর ভাবছেন,  উদ্দেশ্য সাধন হোক বা না হোক আপনিই ঠিক

প্রশ্ন:  ফাঁদটা আসলে কী একটু খুলে বলুন।

উত্তর: আমেরিকাকে যুদ্ধে জড়িয়ে ফেলা। আফগানিস্তানে প্রবেশ করিয়ে নির্মম আঘাত হানা, যাতে নির্দোষ মুসলমানের প্রচুর রক্তপাত ঘটে।  তাহলেই আমেরিকার বিরুদ্ধে মধ্যপ্রাচ্যে বিস্ফোরণ ঘটবে।

 লাদেনের মনে সবসময় একটা বিষয় ঘুরে ফিরে আসে, তাহলোÑরাশিয়াকে পরাস্ত ও বিতাড়িত করেছি। সুতরাং আমেরিকার হাত থেকেও নিষ্কৃতি পেতে হবে এবং তিনিই সবচেয়ে ভালো জানেন আফগানিস্তানে কোথায় বসে কীভাবে যুদ্ধ করতে হবে। আর দিন দিন ঘটনাগুলো এমন জটিল থেকে জটিলতর হতে থাকবে যে, মধ্যপ্রাচ্যের কোনো একনায়ক, রাজা কিংবা রাজপুত্রের পক্ষের তা বোঝা সম্ভব হবে না।  তারা তো বলতে শুরু করবে, আর না এবার থাম আমেরিকা। আর তারা যখন এমনটি বলবে যুক্তরাষ্ট্র তাদের পাত্তা দেবে না। এড়িয়ে যাবে। এভাবে একবার এড়িয়ে গেলে তারা তাদের প্রতি সম্মানের শেষ রত্তিটুকুও হারাবে। এই যুদ্ধ যত দীর্ঘায়িত হবে ততই লাভবান হবে বিন লাদেন।

প্রশ্ন: ১৯৯০-এর দশকে আপনি দুবার বিন লাদেনের সাক্ষাৎকার গ্রহণ করেছেন। লোক হিসেবে তিনি কেমন?

উত্তর: তিনি খুবই বিচক্ষণ লোক। কিন্তু ১৯৯৭ সালে তিনি আমাকে বেশ হতাশ করেছিলেন, কারণ কিছুতেই আমি তাঁর নাগাল পাচ্ছিলাম না। আমি তখন ভাবতে শুরু করে দিয়েছিলাম যে,  তিনি আসলে ও ধরনের নায়ক নন যিনি পাহাড়ের ওপর মোবাইল ফোন নিয়ে হাঁটেন আর নির্দেশ দেন, অপারেশন বি, আক্রমণ চালাও।  

প্রখর স্মৃতিশক্তির কারণে মি. লাদেন কিছুই ভোলেন না। তিনি নিখুঁত বর্ণনা দিয়ে গেলেন, আমেরিকার বিরুদ্ধে সোমালিয়ায় কীভাবে তিনি যুদ্ধ করেছেন। তিনি এও বললেন যে, পাকিস্তানে তাঁর কী পরিমাণ মোল্লা সমর্থক রয়েছে। তারা কীভাবে পাকিস্তানে ওয়াল পোস্টারিং করছে, ‘আমরা বিন লাদেনের অনুসারী।তিনি কোডাক ক্যামেরায় তোলা জোড়া দেওয়া কটা ফটো আমাকে দেখালেন। সাড়ে চার বছর আগে করাচির দেয়ালে দেয়ালে এ সব ছবি আঠা দিয়ে লাগিয়ে রাখতে আমি দেখেছি। তিনি কটা ছবি আমার হাতে দিয়ে বললেন, ‘রেখে দিন আপনার কাছে, রেখে দিন। দেখুন আমার কথার প্রমাণ।

তাই আমেরিকা যখন তাঁর মাথার বিনিময়ে মিলিয়ন ডলার পুরস্কার ঘোষণা করল,  তখন প্রথমেই আমার মনে হয়েছিল, এ পরিমাণ অর্থ তার মাথার মূল্য হিসেবে খুবই কম হয়ে গেল। কারণ, এ পরিমাণ অর্থ তিনি যেকোনো সময় যে কাউকে দেবার সমর্থ রাখেন। দ্বিতীয়ত যা মনে হয়েছিল, তাহলো, তিনি এখন আমেরিকার এক নাম্বার শত্রু। বরাবরই তিনি তা হতে চেয়েছেন।

 যে বিন লাদেনের সঙ্গে আমি তিনবার মিলিত হয়েছি। তিনি খুব সাধারণ একজন শ্বেতাঙ্গ সৌদি। তিনি পরতেন কারুকাজহীন সাধারণ সৌদি একটি কুর্তা  আর কম দামী এক জোড়া প্লাস্টিকের স্যান্ডেল। তবে হ্যাঁ, একবার আমি তাঁকে জাঁকজমকপূর্ণ পোশাকে দেখেছিলাম। লেবানিজ টেলিভিশনে তিনি সোনার কারুকাজ করা কুর্তা গায়ে দেখা দিয়েছিলেন। সেটা সেপ্টেম্বর ১১-এর মাত্র কিছুদিন আগে। আমার তখন মনে হয়েছিল, মি. লাদেন বদলে গেলেন নাকি?

প্রশ্ন : লাদেনের পরে কী হবে?

উত্তর : দিনের শেষে লাদেনের লক্ষ্য অবশ্যই ওয়াশিংটন এবং নিউ ইয়র্ক নয়। তাঁর লক্ষ্যস্থল মধ্যপ্রাচ্য। তিনি চান সৌদি আরব। তিনি চান হাউজ অব সাউদ-এর লাগাম টেনে ধরতে। এমনকি রাজপরিবারের প্রতি তাঁর ভেতরে প্রচ- ক্ষোভ জমা হয়ে আছে। কারণ তারা নিজেদের নিরাপত্তার স্বার্থে আমেরিকান সেনাবাহিনীকে সেখানে ঢুকতে দিয়ে অনবরত থাকতে দিচ্ছে। মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর মধ্যে সৌদি আরবই হচ্ছে সবচেয়ে দুর্বল দেশ। যদিও আমরা এমনটি বলতে পারি না। এবং দুর্ভাগ্যবশত মি. লাদেন তাঁর অঙুলি প্রসারিত করে রেখেছেন দীর্ঘদিন ধরে আরবদের প্রতি যে অবিচার করা হচ্ছে সেটার প্রতি। প্রতিনিয়ত আগ্রাসন চালিয়ে ইসরাইলিরা যে ফিলিস্তিনিদের অধিকার বঞ্চিত করছে সেটার প্রতি। আরবদেরও আক্রোশ ক্রমশই ঘনীভূত হচ্ছে অবরোধের ফলে ইরাকে যে হাজার হাজার শিশু না খেয়ে বিনা চিকিৎসায় মারা যাচ্ছে এ জন্য। পশ্চিমাদের মদদপুষ্ট ক্ষুদ্রমনা একনায়কদের অধীনে অবমাননাকর জীবনে বড় অতিষ্ঠ লক্ষ লক্ষ আরব।

লাদেন এসব করে বিশ্বনিন্দা কুড়াচ্ছেন আর তাতে কোনো লাভও হচ্ছে না। আর যখন তিনি তা করছেন যথার্থ দৃঢ়বিশ্বাস না নিয়েই করছেন। অথচ তার কণ্ঠ সমগ্র আরব বিশ্বে অকল্পনীয় ঘৃণার জন্ম দিচ্ছে। একটি সম্পাদকীয়তে লেবানিজ একটি পত্রিকা লিখেছে, আরবদের জন্য খুবই অবমাননাকর যে, একজনই মাত্র মানুষ যিনি তাদের সত্যিকার দিক নির্দেশনা দিতে পারেন। কিন্তু সেই মানুষটিকে কথা বলতে হয় অন্য একটি দেশের পাহাড়ের গুহা থেকেÑএটা আমাদের জন্য আরও অবমাননাকর।

গত পঁচিশ বছর ধরে আমি মধ্যপ্রাচ্যে বাস করছি, আমি ভালো করেই জানি কীভাবে এসব ইস্যুর সৃষ্টি হয়েছে। এমনকি আমার বাড়ির জমিদার মালিক, একজন মার্জিত লেবানিজ। তিনি বলেন, বিন লাদেন যা বলেন আমরা তা নিয়ে ভাবি। আমরা মনে করি, ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টার আর ওয়াশিংটনে হামলা চালিয়েছে বলে বিন লাদেন আমেরিকার টার্গেট নয়, এ জন্য আমেরিকা যে প্রমাণ প্রদর্শন করেছে তাও যথেষ্ট নয়, বিন লাদেন তাদের টার্গেট সত্য বলার জন্য।

প্রশ্ন: সন্ত্রাসের মূল কারণসমূহ কী কী বলে আপনি মনে করেন?

উত্তর: এমন ভয়ঙ্কর ঘটনা ঘটে রাজনৈতিক অব্যবস্থাপনা এবং বিশ্বের বিভিন্ন অংশে অবিচার চলার জন্য। মধ্যপ্রাচ্য খুবই অবিচারের শিকার। সেপ্টেম্বর ১১-এর পরে মি. বুশ বলেছেন, আমি মধ্যপ্রাচ্যে ফিলিস্তিন রাষ্ট্র নিয়ে বরাবরই ভেবে এসেছি। কিন্তু এ কথা তিনি সেপ্টেম্বর ১১-এর আগে বলেন নি। তখন বললে অধিক ধনাত্মক প্রভাব পড়তে পারত। এরপর টনি ব্লেয়ার ঘোষণা দিলেন যে, পশ্চিম জেরুজালেমকে রাজধানী করে ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠিত হোক এটা তিনি সবসময় চেয়েছেন।

আরাফাতকে এরপরই ডাউনিং স্ট্রিটে আমন্ত্রণ জানানো হলো। আবার পাওয়েল পাকিস্তানে এসে ঘোষণা দিলেন যে, তিনি কাশ্মীর সমস্যার সমাধান করতে চান। এতসব কর্মকা-ই প্রমাণ করে যে, যুক্তরাষ্ট্র আর ব্রিটেন বুঝতে পেরেছে এসবের মধ্যে একটি যোগসূত্র আছে। না হলে দীর্ঘসময় ধরে জিইয়ে থাকা সমস্যাগুলোর তাৎক্ষণিক সমাধান তারা কেন দিতে চাইবেন?

প্রশ্ন: সন্ত্রাসের অন্যন্য কারণসমূহ কী, যেমন দারিদ্র্য, ইসলামী মৌলবাদ?

উত্তর:  আমরা ভাবতে ভালোবাসি যে, সন্ত্রাস দারিদ্র্য থেকে উদ্ভূত। এবং অবশ্যই দারিদ্র্যের সাথে এর সম্পর্ক রয়েছে। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে আমরা দেখতে পাচ্ছি ওসব গরীব লোকদের দারিদ্র্য থেকে বেরিয়ে আসার কোনো পথ নেই। তাদের সরকারেরা  বিরোধিতা পছন্দ করে না। এ অবস্থায় কী করতে পারে তারা?

তারা ইসলামের ছায়ায় আশ্রয় নেয়। আর ইসলামই হলো একমাত্র সাংগঠনিক প্রতিষ্ঠান যেখানে তারা তাদের ভাব প্রকাশ করতে পারে। কিন্তু এ ভাব দারিদ্র্য সংক্রান্ত নয়। পাকিস্তানে, গাজার রাস্তায় কিংবা পশ্চিম তীরে একটি মিছিলও আমি দেখিনি যেখানে তারা একটি বাক্যও উচ্চারণ করেছে যে, দয়া করে আমাদের উন্নততর রাস্তা, মাতৃসদন,  ময়লা-আবর্জনা নিষ্কাশনের জন্য নতুন নালা তৈরি করে দাও। আমি নিশ্চিত এসব জিনিস তারা পছন্দ করে কিন্তু মিছিলে এসব জিনিসের জন্য দাবি তুলে একটি শব্দও উচ্চারণ করে না। তাদের মিছিল শেষের বক্তৃতায় বলে, ন্যায়বিচারের কথা, পশ্চিম তীরে ইসরাইলের আগ্রাসন বন্ধ করার কথা। পাকিস্তানের রাজপথে যে মিছিল হয়, সেখানে প্রতিবাদ থাকে আফগানিস্তানে নিরীহ মানুষ, নারী-শিশু হত্যার বিরুদ্ধে। হ্যাঁ, তারা গণতন্ত্রের জন্যও বিক্ষোভ করে কিন্তু দারিদ্র্য নিয়ে কথা বলে না। মৌলবাদ দারিদ্র্যের প্রসবকৃত সন্তান নয়। প্রচুর দরিদ্র দেশ পৃথিবীতে রয়েছে কিন্তু সে সব দেশে কোনো সন্ত্রাস নেই। কারণ তাদের কাছে দারিদ্র্য এক ধরনের ন্যায় বিচার এবং কোনো কোনো দেশে এর অপর নাম গণতন্ত্র। সন্ত্রাসের জন্ম হয় অবিচার আর আগ্রাসন থেকে এবং আগ্রাসনের শিকার লোকেরা মনে করে কোনোদিন তারা ভালো ব্যবহার পাবে না। কোথাও এটার মানে মিলিটারি আগ্রাসন আর কোথাও এটার নাম জাতিসংঘের ম্যান্ডেটে অবরোধ, না খাইয়ে রাখা। আবার কোথাও এটার নাম একনায়কতান্ত্রিক শাসন, যার পেছনে থাকে পশ্চিমাদের সমর্থন, যা শেষতক তাদের ওপর চেপে বসে। এ সব কারণেই মানুষ সন্ত্রাসী হয়, এ ছাড়া তাদের আর কিছু করণীয় থাকে না।

প্রশ্ন: ইসলামী মৌলবাদ সম্পর্কে মুসলমানদের মনোভাব কী?

উত্তর: মুসলিম বিশ্ব আসলে বিন লাদেন, মোল্লা ওমর কিংবা মুহামেদ আতা সম্পর্কে কোনো প্রশ্ন করতে এখনও শুরু করেনি। ওসব লোকেরা কেমন করে আজকের এ অবস্থানে এলো সামাজিকভাবে এ সম্পর্কে একটি প্রশ্নও উঠেনি কিংবা অনুষ্ঠিত হয়নি একটিও জরুরি বিতর্ক অনুষ্ঠান। স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন জাগে, মধ্যপ্রাচ্যের কিংবা উপমহাদেশের মুসলমানগণ এ প্রসঙ্গে কবে প্রশ্ন তুলবে? যারা বিশ্বাসী, যারা নিজেদের সত্যিকার মুসলিম বলে দাবি করে, নবী ও ঈশ্বরের নাম নিয়ে তারা কীভাবে এমন বিমানে চড়তে পারে, যে বিমান নির্দোষ মানুষ হত্যা করতে যাচ্ছে? তারা তো দেখছে বিমানে আরও যাত্রি রয়েছে। তারা কি দেখছে না তাদের সহযাত্রি মহিলার কোলে তার ছোট্ট শিশুকন্যা। তারা কি দেখছে না মহিলারা তাদের স্বামীদের কাছে, পুরুষেরা তাদের স্ত্রীদের সঙ্গে ফোনে কথা বলছে। তারা তো জানে কাদের তারা হত্যা করছে। ওসব লোকেরা নিজেরাও তো তাদের স্ত্রী ও সন্তানদের নিয়ে বিমানে উঠছে। তাদের সঙ্গে রয়েছে আরও নিরীহ মানুষ। কিন্তু তারা জানত সবাইকে তারা হত্যা করতে যাচ্ছে। এবং এ উদ্দেশ্যে কাজ শুরু করার সময় তারা পবিত্র কোরান থেকে তেলাওয়াত করেছে।

এখন সমস্যাটি চিহ্নিত করতে হয়। আমি মনে করি সমস্যাটি অনেকদিনের। আর তা শুধু মুসলিম বিশ্বেরই সমস্যা। একটি দীর্ঘ রাজনৈতিক অবিচার এমন একটি হিংসাত্মক পরিস্থিতির সৃষ্টি করে দিয়েছে। আমেরিকানরা ওইদিন ওসব বিমানে চড়ে নি, যে সব বিমান বিল্ডিংগুলোর ওপর ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। আমাদের মনে রাখা উচিত, মানবতার বিরুদ্ধে সেদিন যারা অপরাধ করেছিল-তারা আরব। কিন্তু কাউকেই আমি এ ইস্যুটি নিয়ে কথা বলতে  দেখিনি-যা উচিত ছিল।

প্রশ্ন: বুশের মুখ থেকে যখন একজন ধার্মিকের ভাষা বেরিয়ে আসে, যখন তিনি বলেন, ঈশ্বর নিরপেক্ষ নন, আপনি তখন ওটাকে কীভাবে নেন?

উত্তর: আমি যা কিছু বলতে পারি তার সবই বলা হয়েছে যুদ্ধবিরোধী কবি সিগফ্রেড স্যাসুনের কবিতায়। তিনি লিখেছেন, ঈশ্বর জার্মান এবং ব্রিটিশ উভয় ফ্রন্ট লাইনে যুদ্ধরত সৈনিকদের প্রার্থনা শুনছেন। সবাই প্রার্থনা করছে জয়ের জন্য। লাইনগুলোতে বলা হয়েছে, ‘ ঈশ্বর, ও ঈশ্বর, আমার ঈশ্বর সহায় হও।ঈশ্বর বলছেন, ‘বুঝেছি, আমার কাজ হলো নিজেকে নিরপেক্ষ রাখা।

প্রশ্ন: কী ঘটবে যদি বুশ লাদেনকে পান?

উত্তর: আমি জানি না কী ঘটবে যদি লাদেনকে তারা পান?  আমি বরং এটা জানতে খুব বেশি আগ্রহী যে, যদি তারা লাদেনকে না পান তাহলে কী ঘটবে?